ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে আনা অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসুত দাবি করেছেন জৈন্তাপুর জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা অভিযোগকারী বালাগঞ্জ উপজেলার জনৈক মিজু আহমদ লুলুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. বশির উদ্দীন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বালাগঞ্জ উপজেলার জনৈক মিজু আহমদ লুলু ড. এনামুল হক সরদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, কুরুচিপুর্ণ এবং কল্পনাপ্রসুত অভিযোগ উত্থাপন করেছেন; যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে সংবাদ সম্মেলন করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘আমাদের এলাকায় ইমরান আহমদ এমপি’র নেতৃত্বে প্রায় দুইযুগ ধরে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব শুরু হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। সেই ধারাবাহিকতায় নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে এলাকাবাসী ও ইমরান আহমদের উদ্যোগে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইমরান আহমদ মহিলা কলেজ।’
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কলেজের নানা সাফল্যের বর্ণনা দিয়ে তারা বলেন, ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান এনামুল হক সরদার। তখন থেকে অদ্যবধি এই কলেজের ছাত্রীরা উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করে যাচ্ছে। প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় চারশ এবং স্নাতক পর্যায়ে শতাধিক ছাত্রী এই কলেজে ভর্তি হয়। বর্তমানে এই কলেজের ছাত্রী সংখ্যা সহস্রাধিক।
এনামুল হক সরদার এই কলেজে প্রায় বিশ বছর থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় এলাকার জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক তার বিরুদ্ধে নূন্যতম অভিযোগ পাননি বলে জানান তারা। বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল আহমদ ও আলীরগাও ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন এই কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তাদের কাছে কোনোদিন কেউ এ রকম অভিযোগ করেননি। অথচ বালাগঞ্জ থেকে তথাকথিত শিক্ষানুরাগী মিজু আহমদ লুলু এমন জঘন্য মিথা অভিযোগ করলেন, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
ড. এনামুল হক সরদার একজন দক্ষ প্রশাসক, শিক্ষাবিদ,শিক্ষানুরাগী এবং সজ্জন ব্যক্তি উল্লেখ করে তারা বলেন, এখানে নিয়োগ পাওয়ার আগে গোয়াইনঘাট কলেজ ও জৈন্তিয়া কলেজে প্রায় নয় বছর অধ্যাপনা করেন ড. এনামুল হক।ইমরান আহমদ মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সময় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা ছুটি নিয়ে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ইমরান আহমদ মহিলা কলেজ এ যোগদানের পর যখন কলেজে আর্থিক সমস্যা ছিল তখন তিনি এবং তার সহধর্মিণী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা কলেজে আর্থিক সহযোগিতা করে দাতা সদস্যও হয়েছেন। কলেজের বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন। এমনকি এলাকার হতদরিদ্র অনেক শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা কলেজ ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয়করণের সময় কাগজপত্র পর্যালোচনার সময় মন্তব্য কলামে লিখা হয় কলেজের অধ্যক্ষের নিয়োগকালীন সময়ে কাম্য অভিজ্ঞতা ছিল না। এ প্রসঙ্গে এলাকাবাসী বলেন, ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে যখন এনামুল হক সরদারকে নিয়োগ দেয়া হয় তখন নতুন কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বেলায় পূর্ণ অভিজ্ঞতা আবশ্যক ছিল না। গভর্নিং বডি তাঁকে যথানিয়মে নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি যথানিয়মে এমপিওভুক্ত হোন।
লিখিত বক্তব্যে তারা আরও বলেন, কলেজ জাতীয়করণের বাছাই কমিটিতে ডক্টর এনামূল হক সরদার ব্যক্তিগতভাবে নিজে আত্মীয়কৃত হতে আগ্রহী না হওয়ায় অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত বিষয়টির ব্যাখ্যা অবদার করেননি। অথচ লুলু এই বিষয়টির অপব্যাখ্যা করে এনামুল হক সরদার কে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন।
অভিযোগকারী মিজু সম্পর্কে তারা বলেন, আমরা মিজু আহমদ লুলুর ব্যাপারে তার নিজ থানা বালগঞ্জে খোজখবর নিয়ে জেনেছি তিনি সমাজের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। ২৯ এপ্রিল ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ১১ নম্বর এফআইআর এ জুয়া আইনে একজন এজাহারভুক্ত আসামি।
মিজু কারও মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে এমনসব অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন এলাকাবাসী। তারা বলেন, মিজু আহমদ লুলুর বক্তব্য পাঠ শুনে আমাদের মনে হয়েছে তিনি কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অর্থের বিনিময়ে এরকম কাজ করেছেন। একটি মহল সংবাদ সম্মেলনের পর লুলুর বক্তব্য ও প্রকাশিত সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে প্রচার করছে তাতে স্পষ্ট প্রমাণ হয় এসব অভিযোগ দায়ের ও সংবাদ সম্মেলন পরিকল্পিত। এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলিনা রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইন্তাজ আলী, ফখরুল ইসলাম, বাহারুল আলম বাহার, কামরুজ্জামান চৌধুরী ও মো. নজরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক শাহেদ আহমদ, শিক্ষানুরাগী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল হাফিজ, শিক্ষক ও সাংবাদিক মঞ্জুর আহমদ প্রমুখ।