সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার গোলকপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নির্বাচনী জনসভায় উগ্র-সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নবী হোসেন । একই সাথে বাংলাদেশ পুলিশের(আইজিপি) প্রধানকে নিয়ে করেছেন বিতর্কিত মন্থব্য। এ সময় মঞ্চে বসা ছিলেন সুনামগঞ্জ-১(জামালগঞ্জ,তাহিরপুর,মধ্যনগর ও ধর্মপাশা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।
এই দায়িত্বশীল দুই নেতার সাম্প্রদায়িক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এলাকায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। তাদের এমন উস্কানিমূলক বক্তব্যে সাধ্রান ভোটারদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দু,মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার। নির্বাচনী সভায় জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নবী হোসেন সাম্প্রদায়িক বক্তব্যে উল্লেখ করেন ‘ সুনামগঞ্জ-১ আসনে হিন্দু কোটায় রঞ্জিত চন্দ্র সরকারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, একই সাথে তিনি বলেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান (আইজিপি) শেখ হাসিনাকে এমনভাবে বলেছেন যেন তাঁর ছোট ভাই আল আমীন চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়,দেয়াও হয়েছে। তাই জয়াসেন গুপ্ত ঐ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাননি। আর এই কারণেই হিন্দু কোটায় রঞ্জিত চন্দ্র সরকার সুনামগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। সম্প্রতি ধর্মপাশা উপজেলার গোলকপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের উপস্থিতিতে এক সভায় এসব কথা বলেন নবী হোসেন।সুনামগঞ্জ-১(তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য তৃণমূলের ছাত্ররাজনীতি থেকে জেল জুলুম অত্যাচার আর নির্যাতন সহ্য করে বেরে উঠা এই রঞ্জিত চন্দ্র সরকার। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।যার বিরুদ্ধে এমপি থাকাকালীন সময়ে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বলেছেন, “আমাদের মনোনয়ন না দেওয়ার কারণ হল ‘হিন্দু কোটা’। এবার আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু কোটায় ১৫টি সিট দিয়েছেন। তাদের কোটা আছে, এই কোটা প্রথায় ৫০ বছর ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোটাগত নির্বাচন করতেন। তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা ও দুইবার নির্বাচন করেছেন। পুলিশ প্রধান, প্রধামন্ত্রীর পায়ে ধরে তাঁর ছোট ভাই আল আমীন চৌধুরীর জন্য মনোনয়ন চেয়েছেন বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। ‘ এছাড়া পুরো বক্তব্যেই ছিল সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে উগ্র বক্তব্য । তার এই বক্তব্যের ভিডিও শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তাঁর বক্তব্য এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে– এমন আশঙ্কার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শামিয়ানা টাঙ্গানো একটি জায়গায় এই সভা হচ্ছে। সেখানে চারপাশে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পোস্টার সাটানো ছিল। এম নবী হোসেন দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জনতার উদ্দেশে এমন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদান করছিলেন।
ওই আসনের হিন্দু ভোটারদের উদ্দেশে নবী হোসেনকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা এখন নৌকার প্রার্থীর জন্য এক হয়ে গেছেন। কিন্তু দিরাই-শাল্লার দিকে চেয়ে দেখুন সেখানে ৩৯ ভাগ হিন্দু ভোট। তারা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তার প্রতীক কেটলিতে ভোট দেওয়ার জন্য কাজ করছেন।
একই মঞ্চে বসে থেকে জামালগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীও দিয়েছেন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য। ৩ মিনিটের এক ভিডিওতে তাকে বলতে শুনা যায়, ‘ তোমরা হিন্দু কয়ডা ? তোরার যদি এক পা হয় মুসলমানের হবে চৌদ্দ পা, কুলাবে? কয়ডা ভোট তোরার ? মুসলমানে গরু খায় আর তোরা নিরামিষ খাস”। রতন এমপির সামনে আ.লীগের এই দুই নেতার মন্থব্যে এলাকার সচেতন মহলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, ‘এই দুই আওয়ামীলীগ নামধারী নেতাদের বক্তব্যে প্রমানিত হয় ওরা কোনদিনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন আওয়ামীলীগার হতে পারে না। ওরা আওয়ামীলীগের লেবাসে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির চেয়েও ভয়ংঙ্কর সাম্প্রদায়িক মানুষ ওরা বিপদজনক এদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।। একেই সাথে পুলিশ প্রধানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্থব্য করার জন্য নবী হোসেনকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ বলে ও অভিমত তাদের।’
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: মাসুদ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এই বক্তব্যে নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। আমি সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তাঁকে (নবী হোসেন) তলব করছি। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং এমন বক্তব্য আর দিবেন না বলে মুছলেখা দিয়েছেন। তবে মোহাম্মদ আলী হোসের বক্তব্যটি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিবো প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।